রাকিবুল হাসান, মনপুরা প্রতিনিধি: ভােলার মনপুরায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রভাবশালীর মহলের ইন্ধনে অসাধু জেলেরা রাতের আঁধারে মেঘনায় অবাধে মা ইলিশ শিকার করছে।এতে স্থানীয় প্রশাসন নিরব থাকার কারনে ওই প্রভাবশালী মহলটি জেলেদের দিয়ে মেঘনায় মা ইলিশ শিকার করায় বলে অভিযােগ জেলেদের।
এভাবে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ প্রজনন মৌসুমে মেঘনায় মা ইলিশ শিকার অব্যাহত থাকলে ইলিশের উৎপাদন ও বংশ বিস্তার ব্যাহত হবে বলে আশংঙ্কা করছেন ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান।
তিনি জানান, মা ইলিশ নিরাপদে প্রজননের জন্য সরকার ৭ অক্টােবর থেকে ২৮ অক্টােবর ২২ দিন ইলিশ শিকার নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এই ভরা পূর্ণীমার জাতে সাগর থেকে জাঁকে জাঁকে ‘মা’ ইলিশ মেঘনায় এসে ডিম ছাড়ে। এই সময় মা ইলিশ শিকার করলে ইলিশের বংশ বিস্তার রােধ সহ উৎপাদন কমে যাবে। এছাড়াও তিনি স্থানীয় প্রশাসনকে ২২ দিন সরকারি নিষেধাজ্ঞার মধ্যে জেলেরা যাতে মা ইলিশ শিকার করতে না পারে সেই ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরােধ করেন।
স্থানীয় সূত্রে আরো জানাযায়,নিষেধাজ্ঞা কিছুদিন পর থেকে গভীর সমুদ্রে চলে গেছেন সমুদ্রগামী অনেক ফিশিং ট্রলার। তারা ইলিশ শিকার করে নিষেধাজ্ঞা শেষে ফিরে আসবে।
এতে স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন যে,স্থানীয় প্রশাসন কোন টহল ও অভিযান পরিচালনা করছেন না। ফিশিং ট্রলার গুলো বঙ্গ সাগরে যেতে হলে অবশ্যই হাতিয়া নৌ পুলিশ ও কোস্টঘাট এর নাকের ডগায় দিয়ে যেতে হচ্ছে। এতে মা ইলিশ রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করছে।
জেলেদের সূত্রে আরো জানা যায়, উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের পূর্বপাশে মেঘেনায় জংলারখাল এলাকায় অহিদ মাঝি ও মিরাজ মাঝি রাতের বেলায় অবাধে ইলিশ শিকার করছেন। এছাড়াও একই ইউনিয়নের আনছার চেয়ারম্যান হালটের মাথায় বাবুল মাঝি, ফরিদ মাঝি ও মােসলেহউদ্দিন মাঝি ইলিশ শিকারে যায়। এছাড়াও নাইবেরহাট, সূর্যমূখী, কাউয়ারটেক ও লতাখালী এলাকায় একাধিক মাঝি রাতের আধাঁরে ইলিশ শিকার করেন। এরা সবাই স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে নদীতে যায় বলে জেলেরা নিশ্চিত করেন।
এদের মধ্যে আনছার চেয়ারম্যান হালটের মাথায় বাবুল মাঝি জানান, তিনি পরপর ৩ দিন রাতের বেলায় মেঘনায় ইলিশ শিকারে যায়। ৩ দিনই নদীতে অভিযানে থাকা সদস্যদর হাতে আটক হয়। কিন্তু ৩ দফা ৬০ হাজার টাকা দিয়ে তারা মুক্তি পায়। এবং ইলিশ মাছ নিয় যায়। কিন্তু কোথাও এই ইলিশ মাছ বিতরনের খবর তারা পাইনি। অভিযানে সদস্যরা যাওয়ার সময় ধৃত ইলিশ নিয় যায়।
সরজমিনে গত কয়েকদিন মেঘনার জংলারখাল ঘাট, আনছার চেয়ারম্যান ঘাট, কাউয়ারটেক ঘাট, সূর্যমুখী ও লতাখালী ঘাটে রাতে গিয়ে দেখা যায়, প্রশাসনকে ম্যানেজ করা জেলেরা ঘাট থেকে নৌকা ছেড়ে মেঘনায় অবাধে মাছ শিকার করছে। সন্ধ্যা ৭ টা থেকে রাত ২ টা পর্যন্ত ৭ ঘটা অবস্থান করে উপজেলা মৎস্য অফিস ও কােস্টগার্ডের কােন টহল টীম নজরে আসেনি। জেলেরা রাতে বেলায় আলাে নিভিয়ে দুই দফা জাল ফেলে মাছ শিকার করছে। এই সমস্ত ঘাট এলাকায় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ইলিশ শিকার করে বল কােন টহল টীম আসে না বলে অভিযােগ করেন ইলিশ জেলেরা।
এই ব্যাপারে সকল অভিযাগ অস্বীকার করে মনপুরা মৎস্য কর্মকর্তা ভিক্টর বাইন জানান, দিন-রাত মেঘনায় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। মনপুরার চারপাশে মেঘনা নদী থাকায় ও জনবল সংকটের কারনে একস্থানে অভিযান দিলে অন্যান্য স্থানে অরক্ষিত থাকে। এই ফাঁকে কিছু হতেপারে বলে শিকার করেন। তবে সবাইকে সচেতন হওয়া উচিত বল তিনি মন করেন।
এই ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আশিষ কুমার জানান, ট্রেনিং শেষ শুক্রবার মনপুরা এসেছি। মৎস্য অভিযানে কােন শথিল্য বরদাস্ত করা হবে না। কঠােরভাবে অভিযান পরিচালনা করা হব।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।